গ্র্যান্ড জামিয়া মসজিদ, লাহোর

Grand Jamia Mosque, Lahore

গ্র্যান্ড জামিয়া মসজিদ, লাহোর

গ্র্যান্ড জামিয়া মসজিদ পাকিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ। যা লাহোরের বাহরিয়া টাউনে অবস্থিত। এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ও সবচেয়ে সুন্দর মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। ৭০,০০০ মুসল্লি ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট এই মসজিদটি বিশ্বের চৌদ্দতম বৃহত্তম মসজিদ। গ্র্যান্ড জামিয়া মসজিদ বাদশাহী মসজিদ নামেও পরিচিত।

নির্মাণঃ ঐতিহাসিক এই মসজিদটির নকশা করেছিলেন নাইয়ার আলী দাদা। মুঘল সাম্রাজ্যের সময় ১৭ শতকের শেষের দিকে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিলো। বাদশাহী মসজিদ, ওয়াজিব খান মসজিদ এবং শেখ জায়েদ মসজিদ দ্বারা প্রভাহিত এই মসজিদটি নির্মাণে প্রায় ৪ বিলিয়ন রুপির (প্রায় ৩৯ মিলিয়ন ডলার) বেশি ব্যয় হয়েছিলো। ২০১৪ সালের ৬ অক্টোবর অর্থাৎ পবিত্র ঈদ-উল-আযহার দিন মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়।

স্থাপত্যঃ মসজিদটিতে আধুনিক ডিজাইনের উপাদানগুলোর সাথে ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক স্থাপত্যের মিশ্রণ রয়েছে। কাঠামোটিতে ১৬৫ ফুট উঁচু বিশিষ্ট চারটি মিনার এবং একটি বিশাল গম্ভুজ যার চারদিকে ২০টি ছোট গম্ভুজ রয়েছে। মসজিদটির এক তলায় একটি ইসলামি ঐতিহ্য যাদুঘর রয়েছে। যা দুর্লভ কুরআনের সংগ্রহ, ইসলামি গ্রন্থাগার এবং বিভিন্ন প্রাচীন হস্তনির্মিত নিদর্শনসহ ইসলামি শিল্পের চিত্রশালা প্রদর্শন করে। মসজিদটির বাহিরে চার মিলিয়নেরও বেশি মুলতানি হস্তশিল্পের মোজাইক টাইলসগুলো মসজিদের পৃষ্ঠে জুড়ে রয়েছে। এছাড়াও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত কাস্টম-তৈরি কার্পেট এবং ইরান থেকে আমদানিকৃত ৫০ টিরও বেশি ঝাড়বাতি দ্বারা বিশাল এই মসজিদটি সজ্জিত।

নকশাঃ পুরো কাঠামোটির ভিত্তিটি মাটি থেকে ২০ ফুট এবং ছাদটি ৮০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। বিশাল চারটি মিনার কাঠামোর চূড়াগুলো চিহ্নিত করে। বৃহত্তম কেন্দ্রীয় গম্বুজ এবং বেশ কয়েকটি মিনার সহ ঐতিহ্যগত ইসলামী এবং আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর মিশ্রণে এর সৌন্দর্য এক অপাহার রুপ ধারণ করে। ৪০ ফুট উচ্চতা এবং ৫০ ফুট ব্যাস বিশিষ্ট গম্বুজটি দুর্দান্ত কারুকার্যমণ্ডিত মসজিদটির মুকুট রত্ন। প্রতিটি মিনারের গোড়ায় ৪ টি খিলান আকৃতির রঙিন বিস্তৃত মোজাইক শিল্প দ্বারা সজ্জিত কাঠের দরজা রয়েছে যা কাঠামোটির শীর্ষে সমস্ত দিকে আরোহণ করেছে। ল্যান্ডস্কেপ প্রাঙ্গণটি “চারবাগ” শৈলিতে নকশা করা হয়েছে এবং উপ-মহাদেশের অনেক দুর্দান্ত মসজিদে এমন পারস্যরীতির বাগান বিন্যাস দেখা যায়। চতুর্ভুজ আকৃতির এই বাগানটি চারটি চলারপথ দিয়ে চারটি অংশে বিভক্ত যার মাঝখানে একটি সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে।

মসজিদটিতে আরও বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ একটি বড় প্রার্থনা হল, ধর্মীয় শিক্ষার জন্য শ্রেণীকক্ষ, একটি লাইব্রেরি এবং বেশ কয়েকটি উঠান। গ্র্যান্ড জামিয়া মসজিদ স্থানীয় উপাসক এবং লাহোরে আসা পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য এবং এটি এর প্রশস্ত মাঠ এবং চমৎকার স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। উপাসনার স্থান হিসাবে পরিবেশন করার পাশাপাশি, গ্র্যান্ড জামিয়া মসজিদটি ধর্মীয় উৎসব রাজনৈতিক সমাবেশ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মতো সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান এবং কার্যকলাপের জন্যও ব্যবহৃত হয়।